
সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে !!!
ইসরাক মুস্তাকীম ইসলাম
ছোটবেলায় ঠিক প্রাচীন মানুষের মত আমরা ভাবতাম, পৃথিবীটা বুঝি সমতল আর সূর্য আমাদের চারপাশে ঘুরে। আরেকটু বড় হয়ে আমরা জানতে পারলাম, পৃথিবী গোলাকার যা অ্যারিস্টটল প্রমাণ করেছিল। এরপর জ্ঞানের পরিধি বিকাশের ধারাবাহিকতায় জানতে পারি সূর্য নয়, বরং পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে। যে আবিষ্কার কোপার্নিকাসের কীর্তি এবং যার জন্য শেষ বয়সে এসেও গ্যালিলিওকে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছিল। তবে আমরা যদি একটু ঘুরিয়ে চিন্তা করি তাহলে কিন্তু গ্যালিলিওর এই ত্যাগ বিফলে যায়। ব্যাপারটা বোঝানোর আগে আপেক্ষিক গতির একটা বিষয় সম্পর্কে একটু মনে করিয়ে দিই। আমরা তো জানি কোনো বস্তু স্থির না গতিশীল তা নির্ণয়ের জন্য একটি স্থির বিন্দু নির্ধারণ করা হয়। যার সাপেক্ষে বস্তুটি স্থির বা গতিশীল হয়। যেমন ধরা যাক আমরা একটি বাসে করে কোথাও যাচ্ছি। বাসটি সামনে চলতে থাকলে আমাদের কাছে মনে হবে বাইরের সবকিছু আমাদের পেছনে চলে যাচ্ছে। এখানে আমাদের বাসটি হল স্থির বিন্দু। কারণ বাসকে আমরা গতিশীল মনে করছিনা। এবার ধরা যাক আমাদের কোনো অতি বাস্তববাদী বন্ধুরস্থির বিন্দু হচ্ছে বাইরের পরিবেশ বা ভূ-পৃষ্ঠ। এরপর দেখা যাক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো পর্যবেক্ষক কী দেখবে। তার কাছে মনে হবে বাসটি গতিশীল আর তার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটি স্থির (যদি সে অতি বাস্তববাদী বন্ধুটির বিপরীত অর্থাৎ অতি কল্পনাপ্রবণ না হয়)। এই ক্ষেত্রে তার স্থির বিন্দু হল ভূ-পৃষ্ঠ বা পৃথিবী। অর্থাৎ যে বিন্দুর সাপেক্ষে আমরা কোনো বস্তুর স্থিতি বা গতি হিসাব করি, তাই হল স্থির বিন্দু। স্থির বিন্দু তো বোঝা গেল। এবার আসা যাক সেই থিওরি পালটানো কথায়। প্রতিটি গতির ক্ষেত্রে যেহেতু স্থির বিন্দু ধরা হয়, তাহলে সৌরজগতের গ্রহগুলোর ঘূর্ণনগতিরও একটি স্থির বিন্দু আছে। আর তা হল সূর্য। অর্থাৎ আমরা সূর্যকে স্থির ধরি বলেই গ্রহগুলো গতিশীল (সূর্যের সাপেক্ষে )। এবার নিশ্চয়ই কিছুটা বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাচ্ছি। যারা এখনো ধরতে পারোনি তাদের উদ্দ্যেশ্যে ব্যাপারটা খুলে বলি। ধরা যাক, আমরা সূর্যের বদলে পৃথিবীকে স্থির বিন্দু হিসেবে নির্ধারণ করলাম। তখন কী হবে? সবশেষে ব্যাপারটা আমাদের ছোটবেলার ভাবনার মতই হয়ে যাবে। তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য হবে গতিশীল এবং সেটি আমাদের চক্রাকার পথে আবর্তন করছে। একেবারে কোপার্নিকান মডেলের বিপরীত। এমনকি সৌরজগতের গ্রহগুলো আমাদের চারপাশে জটিল অথবা সরল কক্ষপথে ঘুরছে। আসলে পৃথিবীকে স্থির বিন্দু ধরলে সৌরজগতের সবকিছুর গতিপথ অনেক জটিল হয়ে যায় এবং মহাকর্ষ বলের সাথে গ্রহগুলোর গতিপথের যে সম্পর্ক আছে তা প্রকাশ পায় না। মূলত এই কারণেই সূর্যকে স্থির বিন্দু ধরা হয়। আবার আমরা যদি গ্যালাক্টিক্যালি চিন্তা করি তাহলে এর কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোল ‘Sagittarius A*’ হবে স্থির বিন্দু। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইউনিভার্সালি চিন্তা করলে কোনো স্থির বিন্দু নেই। কারণ মহাবিশ্বে সবকিছুই গতিশীল যার সূচনা সেই বিগ ব্যাঙ থেকেই।
লেখক : শিক্ষার্থী,
অষ্টম শ্রেণি, রাউবি।